ছবি : ছবি: দৈনিক বাংলার প্রতিচ্ছবি
অনিক রায়, ফরিদপুর প্রতিনিধি। ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ।
রাত পোহালেই মহালয়া। দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের আগাম বার্তা নিয়ে আবারও ফিরে এসেছে বাঙালি সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের আবেগভরা সেই পবিত্র তিথি— মহালয়া, যা পালিত হবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রবিবার। মহালয়ার মধ্য দিয়েই সূচনা হবে দেবীপক্ষের, আর তার পরপরই বাঙালি জাতি মেতে উঠবে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দে।
মহালয়া পালিত হয় বাংলা আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে— যা পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনার এক পবিত্র সন্ধিক্ষণ। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে ভোরবেলা দেবী দুর্গাকে আহ্বান জানানো হয় মর্ত্যলোকে আগমনের জন্য। হিন্দু শাস্ত্র মতে, ব্রহ্মার আদেশে বিশ্বরক্ষার উদ্দেশ্যে দেবী দুর্গার সৃষ্টি হয় এবং মহিষাসুর বধের জন্য তাঁর আবির্ভাব ঘটে। এই কাহিনিই প্রতিফলিত হয় মহালয়ার চণ্ডীপাঠে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মন্দিরে আজ রাত থেকেই শুরু হবে বিশেষ পূজা ও আরতি। কাল সকালে গঙ্গার ঘাট ও নদীর পাড়ে দেখা যাবে পিতৃপূজা ও তর্পণের আয়োজন, যেখানে বহু মানুষ তাঁদের পূর্বপুরুষদের স্মরণে জলদান করবেন।
- বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবছর ঢাকা মহানগরীতে দুর্গাপূজার সংখ্যা ২৫৮টি, আর সারা বাংলাদেশে তা পৌঁছেছে ৩৩,৩৫৫টিতে।
ফরিদপুরের প্রতিমাশিল্পী সিমান্ত পাল বলেন,“মহালয়া মানেই চক্ষুদান। এই দিনটিতেই মা দুর্গার মাটির মূর্তিতে প্রাণ আসে চোখের মাধ্যমে। আমাদের জন্য মহালয়া এক পবিত্র উপলক্ষ।”
এবছর দেবী দুর্গা আসছেন হাতির পিঠে চড়ে। শাস্ত্র মতে, হাতিতে আগমন শুভ লক্ষণ— প্রাচুর্য, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের প্রতীক। এটি ভালো বৃষ্টিপাত, শস্যের সফল ফলন ও সামগ্রিক কল্যাণের ইঙ্গিত বহন করে। তবে ফেরার সময় দেবী যাচ্ছেন পালকিতে বা দোলায়, যার অর্থ— পৃথিবীতে দুর্যোগ, মহামারী, খরা বা যুদ্ধের মতো অশান্তির শঙ্কা থাকতে পারে।
সারাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে এখন বইছে উৎসবের হাওয়া। শুরু হয়ে গেছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি— চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ পর্ব, মণ্ডপ নির্মাণ আর আলোকসজ্জার সাজসজ্জা।মহালয়ার এই দিনটি কেবল ধর্মীয় আচার নয়— এটি বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
মতামত