"আমার আম্মুর নাম সামিরা মনি, আম্মুকে একটা ফোন দাও, একটু দেখব
'মাহিনের জন্ম ২০০৮ সালে। ও'ই ছিল আমার একমাত্র সন্তান। জুলাইয়ের কিছুদিন আগেই কলেজে ভর্তি হইছিল। বয়স ১৫ পার হয়ে ১৬-তে পড়ছিলো।
একমাত্র ছেলে ছিল বলে আমি টেনশন করতাম বেশি। আমাকে কখনো বুঝতেই দিত না যে ও আন্দোলনে যাচ্ছে। অথচ ও প্রত্যেকটা দিন যাইত। গিয়েই ঘন্টাখানেকের মধ্যে চলে আসতো, যেন টের না পাই।
একদিন ধরা পড়ে গেছিল। আমি যখন বকা দিচ্ছিলাম, বলতেছিলো, 'দেখো আবু সাইদ ভাইয়াকে, মুগ্ধ ভাইকে ওরা কিভাবে মেরে ফেলছে। এখন যে ঘরে বসে থাকবে, সে মানুষ না, অমানুষ।'
আমাকে জানাই দিবে বলে কোনো পরিচিত বন্ধুর সাথেই ও আন্দোলনে যাইত না। যাইত মাইলস্টোনের ছাত্রদের সাথে, ওইখানে ওর একটা কানেকশন ছিল।
মাহিন ইংরেজি পারত খুব ভাল। বন্ধুদের সাথে ফোনে আন্দোলনের প্ল্যান করতো ইংরেজিতে, যেন আমি বুঝতে না পারি। তারপর হুট করে বের হয়ে যাইত।
একদিন মনে আছে, ও সকালে বের হইছে। আমি যখন ফোন দিলাম, বলতেছে, 'আম্মু আমি বন্ধুর বাসায় গেইমস খেলতেছি। শেষ হইলেই চলে আসব।' অথচ ও তখন আন্দোলনে।
মাহিনের চোখ দুইটা ছিল অন্যদের চাইতে একটু আলাদা, বাদামি। এইজন্য ওকে এলাকার সবাই আলাদাভাবে চিনতো, আদর করতো। ৪ আগস্ট প্রথম গুলিটাও ওকে মারে বাম চোখে। ওইটা চোখের ভিতরে গিয়ে বসে যায়। দ্বিতীয়টা মারে মাথার পিছনে, যেটা নাকের মাংসের কাছে এসে আটকায়ে যায়।
গুলি খাওয়ার পর আমার ছেলে নাকি একটা কথাই শুধু বলছিলো। আমার আম্মুর নাম সামিরা মনি, আম্মুকে একটা ফোন দাও, একটু দেখব।
এখনো সবসময় মনে হয়, আমার মাহিন এসে দরজার কাছে দাঁড়াবে, আম্মু বলে ডাক দিবে।
কেউ যদি আমার সমস্ত কিছু ছিনায়ে নিয়ে, তার বদলে শুধু আমার মানিকটাকে ফিরায়ে দিত, আমি তাকে সবকিছু দিয়ে দিতাম। আমার ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করে খাইতাম।
এই একটা ডাকের তৃষ্ণা আমার সারাজীবনে আর শেষ হবে না।'
- সামিরা জাহান মনি
(শহিদ আব্দুল্লাহ আল মাহিনের মা, উত্তরা, ঢাকা)
July Records
July Records Global Archive
মতামত