কৃষি

কিশোরগন্জের হাওর: সৌন্দর্যের লীলাভুমি ও জীবন যাত্রার চালচিত্র।

প্রিন্ট
কিশোরগন্জের হাওর: সৌন্দর্যের লীলাভুমি ও জীবন যাত্রার চালচিত্র।

প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী-- এই চারটি উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত সুবিশাল হাওর অঞ্চল। বর্ষাকালে এর অথৈ জলরাশি আর শীতকালে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত এক ভিন্নরুপ ধারণ করে। প্রকৃতির এক অনন্য স্বতন্ত্র সত্বা বহনকারী এই হাওর অঞ্চল কেবল প্রকৃতির সৌন্দর্যের জন্য নয়, এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারনেও এটি বাংলাদেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কিশোরগন্জের হাওর বর্ষায় রুপ নেয় এক বিশাল জলরাশির রাজ্যে। অনেকে একে সাগরের সাথে তুলনা করেছেন তাদের বিভিন্ন লেখায়। এই সময়ে নৌকাগুলি ছুটে চলে অবিরাম। আর জেলেরা মনের সুখে মাছ ধরে। মাছ ধরার পর জীবন্ত মাছের লাফালাফি হাওরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুন। দূর থেকে বর্ষাকালে গ্রামগুলোকে ছোট ছোট দ্বীপের মত মনে হয়। মনে হয় যেন পানিতে ভাসছে। রাতের বেলায় হাওরের সৌন্দর্য আরো বিমোহিত করে। চাদের আলোয় হাওরের ঢেউয়ের মাতামাতি এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরী করে। অসংখ্য পাখির কলকাকলি সারাক্ষন হাওরের প্রকৃতিকে মুখরিত রাখে যা মনকে প্রশান্তি এনে দেয়।

এই হাওরের মানুষের প্রধান জীবিকা হলো মাছ ধরা। এখানে বহু প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। যার উপর নির্ভর করে এখানকার মানুষের জীবন চলে। বর্ষাকালে পানিবন্দি থাকলেও পানি নেমে গেলে শুরু হয় কৃষিকাজ। ধান, সরিষা, বাদাম, তরমুজ, শষা, ক্ষিরাসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য শষ্যের চাষ হয়। একফসলি জমি হওয়া সত্বেও সারা বছরের ধান এই স্বল্প সময়ে ফলানো হয়। বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত ধানের প্রায় এক পঞ্চমাংশ এই হাওর থেকে আসে। মাছ ধরা ও কৃষিকাজের পাশাপাশি বর্তমানে এখানে সমন্বিত পদ্ধতিতে হাসমুরগীর পালন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ঐতিহ্যগতভাবে, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম বা শহরে যেতে নৌকাই ছিল প্রধান ও একমাত্র উপায়। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হাওর অঞ্চলে নির্মিত হয়েছে সাবমার্সিবল রাস্তা ও উড়াল সড়ক। এরফলে এখন খুব সহজে ও অল্প সময়ে বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াত করা সম্বব হচ্ছে। এই আধুনিক অবকাঠামো মানুষের জীবনকে আরো সহজ করে তুলেছে এবং নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরী করেছে।

কিশোরগন্জের প্রায় ২৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই হাওর অঞ্চল শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যেই বিখ্যাত নয়, এটি জীবন ও জীবিকার এক অনন্য কেন্দ্র। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মানুষের সংগ্রামী জীবন মিলেমিশে এক অসাধারণ জীবন চিত্র তৈরী করেছে। বর্ষায় অথৈ জলরাশি এবং শীতে দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেতের এই দুই রুপই হাওরকে বাংলাদেশের এক অনন্য পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিশোরগন্জের এই হাওর সত্যিই " উজান ভাটির মিলিত ধারা, নদী হাওর মাছেভরা "।