নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গর্ব, নারী ফুটবলার সুরভী আকন্দ প্রীতি বর্তমানে ফুটবল বিশ্বে এক পরিচিত নাম। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও তাঁর পায়ের জাদু মুগ্ধ করছে দর্শকদের। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) 'গোলমেশিন' খ্যাত এই স্ট্রাইকার তাঁর সূক্ষ্ম কৌশল আর অসাধারণ ড্রিবলিং দিয়ে একের পর এক গোল করে দেশের জন্য বয়ে আনছেন সুনাম ও গৌরব। তাঁর হাত ধরেই বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের চালচিত্র।
সম্প্রতি সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে তাঁর দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছে। এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর থেকেই তিনি 'তারকা' এবং 'গোলমেশিন' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সুরভীর ঝুলিতে জমা পড়েছে ৯টি গোল। তাঁর দ্রুত গতি, নির্ভুল ড্রিবলিং এবং গোল করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা তাঁকে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছে।
২০২১ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে মাত্র দুই ম্যাচে ৯ গোল করে সবার নজর কাড়েন এই বিস্ময় বালিকা। নান্দাইলের এই প্রতিভাবান ফুটবলার লিওনেল মেসির ভক্ত হলেও বাংলাদেশের স্বপ্নার খেলা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। অভিষেক আসরেই দুই ম্যাচে ৯ গোল করে তারকা বনে যাওয়া প্রীতিকে দেখে অনেকেই মনে করছেন, তিনিই হতে যাচ্ছেন 'ওমেন ইন গ্রিন'-এর দীর্ঘ রেসের ঘোড়া। এক ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে তাঁর ৬ গোল করার ঘটনা ফুটবল মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু কোথা থেকে এলেন এই কিশোরী? ময়মসিংহের নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া প্রীতির বাবা কৃষক আবুল কালাম আকন্দ এবং মাতা গৃহিণী মনোয়ারা খাতুন। পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তান প্রীতির ফুটবলের যাত্রা শুরু হয় ক্লাস থ্রি থেকে। বড় ভাই জহিরুল ইসলাম আকন্দের হাত ধরে ৮ কিলোমিটার দূরের অনুশীলনে যেতেন তিনি। প্রথম থেকেই একজন তরুণ প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। জাহাঙ্গীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরে পাঁচরুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে এফজেএফ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর ফুটবলে হাতেখড়ি হয়। ২০১৮ সালে ওই গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে তাঁর নেতৃত্বে নান্দাইলের পাঁচরুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭, ১৯ এবং সর্বশেষ জাতীয় দলে তাঁর জায়গা হয়।
২০১৯ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরই জেএফএ অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ময়মনসিংহ দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন প্রীতি। একই বছর জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলেও সুযোগ পান। ২০২১ সালে বসুন্ধরা কিংস দলে যোগ দেন তিনি। একই বছর অনূর্ধ্ব-১৯ সাফের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করেন। ২০২২ সালে সিনিয়র জাতীয় দলেও তাঁর অভিষেক হয় এবং ২০২২ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালে সিঙ্গাপুরে এশিয়ান বাছাইপর্বে তাঁর অপ্রতিরোধ্য পারফরম্যান্সের পর থেকে তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তিনি নিয়মিতভাবে জাতীয় দলের হয়ে অসাধারণ পারফর্ম করে যাচ্ছেন।
নান্দাইলের আরও দুইজন নারী ফুটবলার, চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের বারুইগ্রামের মিলি আক্তার বর্তমানে জাতীয় দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক এবং শেরপুর ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়া গ্রামের হালিমা আক্তার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে মধ্যমাঠে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন।
নারী ফুটবলার সুরভী আকন্দ প্রীতির এই সাফল্য ও অগ্রযাত্রায় তাঁর পরিবারসহ নান্দাইলবাসী গর্বিত। প্রীতির উত্তরোত্তর মঙ্গল কামনার পাশাপাশি নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার সহ সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া সংগঠনগুলো তাঁর প্রতি শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়েছেন।
মতামত