শিক্ষাঙ্গন

ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন আরশ খান: ‘এই দেশে আমজনতা হওয়ার থেকে বড় গুণাহ নাই’

প্রিন্ট
ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন আরশ খান: ‘এই দেশে আমজনতা হওয়ার থেকে বড় গুণাহ নাই’

ছবি : অভিনেতা আরশ খান (ফাইল ছবি)


প্রকাশিত : ২০ আগস্ট ২০২৫

ঢাকা | ২০ আগস্ট ২০২৫

জনপ্রিয় অভিনেতা আরশ খান তাঁর ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়ে সমকালীন শিক্ষা ব্যবস্থা, ইতিহাস বিকৃতি এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পোস্টটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে।

পোস্টে আরশ খান নিজের জন্ম, শৈশব ও শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন, “১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ আমার জন্ম। যদিও স্কুল জীবনে ক্লাস টিচার বানায় দিলেন ১৯৯৬ যেন সরকারি চাকরি পাইতে সুবিধা হয়। ততকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।”

তিনি উল্লেখ করেছেন, শৈশবে ধীরে ধীরে সম্পর্ক, ধর্ম এবং সমাজ সম্পর্কে জানতে শুরু করেন। লিখেছেন, “বুদ্ধি হবার পর শিখতে শুরু করলাম সম্পর্ক কি! কে মা কে বাবা কে চাচা কে খালা ইত্যাদি। আল্লাহ কে, নবী কি, ইসলাম কি শিখতে শুরু করলাম। আমার ধর্ম ছাড়াও কি কি ধর্ম আছে তা জানলাম।”

আরশ খান জানান, ১৯৯৮ সালে তিনি স্কুলে ভর্তি হন, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী সময়ে বারবার সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তার শিক্ষা জীবন কেটেছে। “১২ বছরে স্কুল জীবন পুরোটাই কাটলো। এর মাঝে আবারও খালেদা জিয়া আসলেন। ফজলুল হক, ফখরুদ্দিন আহমদ আসলেন, আবার শেখ হাসিনা। এর মাঝে চললো আমার কলেজ, ইউনিভার্সিটি।”

অভিনেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার ২৩ বছরের শিক্ষা জীবনে তার মানে আমি সব কিছুই ভুল শিখেছি। বিশেষ করে ইতিহাস। কারণ আমার দেশে সরকারের সাথে সাথে বদলায় বই, বদলায় ইতিহাস, বদলায় শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম ব্যবস্থা। বদলায় প্রশাসন প্রধান, বদলায় সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং তাদের কাজের ধরন। আমার এক জীবনে এক দেশে এক শিক্ষা ব্যবস্হার আওতাধীনে থেকেও সব বদলায় এবং বদলাতেই থাকে। এই গল্প তো আমার একার না। আমার দেশের সকল মানুষের জীবন ব্যবস্থা এই।”

আরশ খান ইতিহাস বিকৃতি এবং রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার দায়ও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। তিনি লিখেছেন, “তাহলে আমার ইতিহাস না জানার পেছনে উপরে উঠে আসা সকল ব্যক্তিরাই দায়ী, দায়ী শিক্ষা বোর্ড, দায়ী আমার স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি। এই দেশে স্থানের নাম পরিবর্তন করতে করতে আপনারা হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফেলেন, হাজার কোটি টাকা যায় বিদেশে, আর বাকি যা থাকে তার সাথেও হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে করেন দেশের উন্নতি। যখন যে ক্ষমতায় সে দুধে ধোয়া, যে ক্ষমতায় নাই সেই খারাপ।”

পোস্টে তিনি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও জানান। “গতো বছর এই সময়ে আমাকে এক দলের কর্মীরা প্রচুর উত্যক্ত করেছে অনলাইনে, আবার এই বছর জুতা দিয়ে বরণ করলেন আরেক দল। সম্পর্ক বদলে গেলো একটি পলকে...”

অভিনেতা তরুণদের উদ্দেশে একটি কড়া বার্তা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “আমার অনুজদের প্রতি একটাই উপদেশ, তোমরা সুযোগ পেলেই বিদেশে চলে যেও, নিজের মতন জীবন গড়ে নিও। এই দেশে আমজনতা হওয়ার থেকে বড় গুণাহ আর কিছু নাই।”

পোস্টটি শেষ করেছেন নিজের পরিচয় দিয়ে—“তোমাদের ভাই, কালচারাল ফ্যাসিস্ট আরশ খান।”

এই পোস্টের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করছেন, কেউবা সমালোচনাও করছেন। তবে আরশ খানের এই বক্তব্য দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সূত্র: আরশ খানের ফেসবুক পেজ