ঠাকুরগাঁওয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত টিআর প্রকল্পের টাকায় শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের অভিযোগ উঠেছে। কর্দমাক্ত ভাঙা সড়ক ফেলে রেখে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় চত্বরে ফোয়ারা, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বাগান তৈরিতেই খরচ করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর, গড়েয়া, সালান্দরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায় রাস্তা।
কোথাও হাঁটুসমান কাদা, কোথাও বড় বড় গর্ত। বছরের পর বছর ধরে এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের জন্য প্রতিবছর বরাদ্দ এলেও তার সুফল তারা পান না।
গড়েয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আশরাফুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন তো রাস্তার কোনো কাজই হচ্ছে না।
সরকারি বরাদ্দগুলো ঠিক কোথায় যায়, সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না। ছোটবেলা থেকে রাস্তাটা এরকম ভাঙাচোরাই দেখে আসছি। অথচ গ্রামের এই চিত্র পাশ কাটিয়ে জেলা ও উপজেলা সদরে চলছে বিলাসী উন্নয়ন।’
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর কর্মসূচির নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে তার ব্যতিক্রম ঘটেছে।’
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর কর্মসূচির আওতায় জেলার চারটি উপজেলার জন্য ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে জেলা প্রশাসক ২১টি প্রকল্প গ্রহণ করেন। এসব প্রকল্পের সিংহভাগই শহরকেন্দ্রিক এবং গ্রামীণ অবকাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কহীন। শুধু জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরের সৌন্দর্যবর্ধনেই ব্যয় করা হয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া টিআর প্রকল্পের টাকায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সংস্কারে ১ লাখ ১৫ হাজার, শিল্পকলা একাডেমির দেয়াল নির্মাণে ৩ লাখ ৫০ হাজার এবং উপজেলা পরিষদের পাঠাগার ও ওয়েটিং রুম তৈরিতে ৩ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে।
গ্রামীণ মানুষের জন্য আসা টাকায় শহরের এই বিলাসিতাকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে দেখছেন সচেতন নাগরিকরা। শহরের শামীম ইসলাম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘এটা গ্রামের মানুষের সঙ্গে পুরোপুরি অনৈতিক কাজ ও প্রতারণা। এই টাকা গ্রামাঞ্চলে বিনিয়োগ হওয়াই উচিত ছিল, কারণ বরাদ্দটি ছিল তাদের জন্যই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বরাদ্দের বেশিরভাগই আমরা নীতিমালা অনুযায়ী গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ করেছি। তবে স্থানীয় জনসাধারণের আগ্রহ ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সৌন্দর্যবর্ধন এবং শিশুদের খেলার মাঠ উন্নয়নের কিছু কাজ এ বছর টিআর থেকে করা হয়েছে।’
মতামত