ছবি : দৈনিক প্রতিচ্ছবি-পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
স্টাফ-রিপোর্টার(পটুয়াখালী)থেকে)রাকিবুল হাসানের পাঠানো তথ্য ও চিত্রে-
পটুয়াখালী(জেলা)প্রতিনিধি:-বরগুনার আমতলীতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যাওয়া সেই নবজাতকটিও মারা গেছে। জন্মের ২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার আগেই চলে গেল নিষ্পাপ একটি প্রাণ। শনিবার (২১ জুন) রাত ৯টার দিকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যায় শিশুটি।
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ওয়াহিদ শামিম নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শিশুটির শরীর ছিল মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। মাথা, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিল গভীর আঘাতের চিহ্ন। দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকায় শরীর ছিল সম্পূর্ণ ঠান্ডা। এসব কারণেই তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাতে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের বলইবুনা গ্রামে জন্ম নেয় এ নবজাতক। তবে জন্মের পরপরই শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় শনিবার দুপুরে তাকে দ্রুত পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই যাত্রাই হয়ে উঠল জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। পটুয়াখালী যাওয়ার পথে আমতলীর কাছাকাছি পৌঁছালে তাদের বহনকারী অটোরিকশা একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই মারা যান শিশুটির মা মোছাদ্দিকা, গুরুতর আহত হন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও।
দুর্ঘটনার পর যখন উদ্ধারকর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান তখন ধ্বংসস্তূপ ও পানির নিচে পাওয়া যায় কাদায় মাখামাখি সদ্যোজাত শিশুটিকে। নিস্তেজ হলেও তখনো তার নিঃশ্বাস চলছিল। এ যেন অলৌকিক এক দৃশ্য। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তবে দীর্ঘ সময় পানিতে থাকার কারণে তার শরীরের তাপমাত্রা ছিল আশঙ্কাজনকভাবে কম এবং তার অভ্যন্তরীণ ক্ষত ছিল গুরুতর। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেননি।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শিশুটির নিজ গ্রাম বলইবুনা সহ আশপাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সদ্য পৃথিবীতে আগমনেই যে শিশুটি অলৌকিকভাবে মৃত্যুকে জয় করেছিল, অবশেষে তাকেও ছাড়তে হলো পৃথিবীর মায়া। অনেকেই বলছেন, একটি নতুন প্রাণের এই নির্মম পরিণতি আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। জন্মের পর পরই এত কষ্ট, এত সংগ্রাম- এটি সহ্য করা কঠিন।
এই দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয় বরং গোটা সমাজের জন্যই একটি প্রশ্নবিদ্ধ বাস্তবতা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত রাস্তা, চিকিৎসা সেবা পেতে যাত্রার ঝুঁকি এবং দুর্ঘটনার পর দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার ঘাটতি। এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন নাগরিকরা।
মতামত