ছবি : "ধান ব্যাপারিদের হাতে জিম্মি প্রান্তিক কৃষকেরা"
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকেরা। তারা ধান চাষ করে জীবিকা চালায়, কিন্তু ফসল কাটার পর ন্যায্য মূল্য পাওয়া তাদের জন্য অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সরকার ধানের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না রংপুরের প্রান্তিক কৃষকরা। ন্যায্য মূল্য ছাড়াও ধান পরিমাপে গরমিল, মূল্য পরিশোধে দেরি—এই সব নিয়ে নানান অভিযোগ করছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। তাদের প্রতি এমন অসাদাচরণকে ‘জুলুম’ বলেই মনে করছেন তারা।
সরকারিভাবে চলতি বোরো মৌসুমে (২০২৫) ধান ক্রয়ের হার নির্ধারণ করা হয়েছে: ধান (Paddy): ৩৬ টাকা প্রতি কেজি, সিদ্ধ চাল (Parboiled Rice): ৪৯ টাকা প্রতি কেজি। যা ১ মণ (প্রায় ৪০ কেজি) ধানের সরকারি মূল্য দাঁড়ায়:
৩৬ টাকা × ৪০ কেজি = ১,৪৪০ টাকা প্রতি মণ। কিন্তু রংপুরের প্রান্তিক কৃষকেরা মণপ্রতি পাচ্ছেন ৯০০ থেকে ৯২০ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের প্রায় ৩৭.৫% কম।
এছাড়াও ওজন পরিমাপের ক্ষেত্রেও কৃষকরা করছেন নানান অভিযোগ। স্বাভাবিকভাবে প্রায় ৪০ কেজিতে ১ মণ ধরা হলেও, ব্যাপারিরা ৪৫ কেজিতে ১ মণ ধরে ধান ক্রয় করছেন। এবং বস্তার ওজন বাবদ আলাদাভাবে নিচ্ছেন অতিরিক্ত ১ কেজি প্রতিটি বস্তার বিপরীতে। তাছাড়াও পরিমাপের সময় অতিরিক্ত ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম বেশি গেলেও তা গণনা করতে রাজি নন তারা।
অপরদিকে ধান কাটার ক্ষেত্রেও চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে কৃষকদের। কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটতে ১,৮০০ থেকে ২,২০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে প্রতি বিঘায় (২৪ শতাংশে ১ বিঘা ধরে)। যা এক শতাংশের বিপরীতে প্রায় ৭৫ থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত।
রংপুরের প্রান্তিক কৃষক হাফিজুর রহমান তার ৩২ শতাংশ জমিতে এবার হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছেন। তিনি জানান, তার ৩২ শতাংশ জমিতে ৪০ কেজি মণে প্রায় ৩০ মণ ধান হয়। কিন্তু ব্যাপারী ৪৫ কেজিকে এক মণ ধরে প্রায় ২৬ মণ ধান নিয়ে যান ৯০০ টাকা মূল্যে। এতে করে তার ১৪ বস্তা ধান হলে ব্যাপারী বস্তার ওজন বাবদ অতিরিক্ত ১৪ কেজি ধান নিয়ে নেন তার কাছ থেকে।
অন্যদিকে, তরুণ কৃষক মো. জাফর জানান, তিনি তার ২৪ শতাংশ জমির ধান কাটার জন্য হারভেস্টার মেশিন ভাড়া করেন। এজন্য তাকে মালিককে ২২০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।
এমন অতিরিক্ত খরচ ও কম বাজারমূল্য পাওয়ার ফলে প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে গভীর সংকট তৈরি হচ্ছে। এমতাবস্থায় যদি সরাসরি প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় এবং বাজার ব্যবস্থায় যথাযথ নজরদারি না বাড়ানো হয়, তবে সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।"
মতামত