ডোমার উপজেলা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ এখন নির্বাচনপূর্ব এক মোড়লগ্নে দাঁড়িয়ে। ঈদুল আজহার প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে সম্ভাব্য নির্বাচনি রূপরেখার আভাস দিয়েছিলেন, তার পরিপূরক হিসেবেই এবার লন্ডনের আলোচিত বৈঠকে মিললো আরও কিছু সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে আয়োজিত ঐতিহাসিক এই বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস এবং সবচেয়ে বড় বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, উপদেষ্টাদ্বয় শফিকুল আলম ও হুমায়ুন কবির।
রমজানের আগে ভোট—প্রস্তাব তারেকের, সাড়া ইউনূসের
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রমজানের আগেই নির্বাচন চায় দলটি। সেই অনুযায়ী তারেক রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেন আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করার। এমনকি তিনি খালেদা জিয়ার মতামত উল্লেখ করে বলেন, এই সময়টাই সবচেয়ে উপযুক্ত।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এর জবাবে বলেন, সব প্রস্তুতি সময়মতো সম্পন্ন হলে রমজান শুরুর আগেই ভোট আয়োজন সম্ভব। তবে তিনি শর্তসাপেক্ষে বিষয়টি সামনে আনেন—সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়ায় ‘পর্যাপ্ত অগ্রগতি’ নিশ্চিত করতে হবে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যখন সাংবাদিকরা নির্বাচন নিয়ে নির্দিষ্ট সময় জানতে চাইলেন, তখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সোজাসাপ্টা বলেন, “কোনও সমস্যা নেই। নির্বাচন কমিশনের ওপরই আমরা এই দায়িত্ব অর্পণ করছি। আশা করি, তারাই তারিখ ঘোষণা করবে।”
তারেকের দেশে ফেরা: সিদ্ধান্ত একান্তই তার
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে কোনও আলাপ হয়েছে কি না—এই প্রশ্নে বিএনপি নেতা আমির খসরু বলেন, “ওনার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত একান্তই তার। এ বিষয়ে আলোচনা এখন অপ্রয়োজনীয়।”
‘জুলাই সনদ’: ঐকমত্যে পৌঁছানোর পথে
এ সময় আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খসরু বলেন, “দেশে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এটি হবে সম্মিলিত ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সংস্কার ও জুলাই সনদ—দু’টিই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফসল হবে।”
সংলাপের পরিণতি: আশাবাদ ও ঐক্যের বার্তা
বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি এবং সংবাদ সম্মেলনে বারবার ঘুরে আসে ‘ঐকমত্য’, ‘আস্থা’, ও ‘নতুন পথের দিশা’—এই শব্দগুচ্ছ। উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করে বলে, নির্বাচনের আগেই নয়, নির্বাচন-পরবর্তী দেশ গঠনেও থাকবে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়।
এই বৈঠককে শুধু একটি রাজনৈতিক সংলাপ বললে ছোট করে দেখা হবে। এটি ছিল ভবিষ্যতের বাংলাদেশ রচনার খসড়া তৈরির সূচনাপর্ব—যেখানে রাজনীতি কেবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, হতে পারে সহযাত্রার পথনির্দেশও।
মতামত