ছবি : কয়রায় জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবল: ঝুঁকি কমাতে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন রোধে জোর
জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ফলে সৃষ্ট দুর্যোগের তীব্রতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে খুলনার কয়রায় অনুষ্ঠিত হলো এক গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল বৈঠক। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ এবং ডিআরআর সিসিএ প্রকল্পের যৌথ আয়োজনে মঙ্গলবার (২০ মে) বেলা ১১টায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের হলরুমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। "জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জীবন-জীবিকা নিরাপত্তা শক্তিশালীকরণ" কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ অভিবাসন—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ইউপি সদস্য মাছুম বিল্লালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ। মূল বক্তা হিসেবে কারিতাস বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর কাকলী হালদার জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এবং করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ তার বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত মানুষের কর্মকাণ্ডকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মূলত মানুষই দায়ী, এ জন্যই দুর্যোগের মাত্রা আগের তুলনায় বহুমাত্রায় বেড়ে চলেছে ফলে মানুষ হচ্ছে গৃহহারা এবং উদ্বাস্তু।" এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, দুর্যোগ সহনশীল গৃহ তৈরি, এবং বাস্তুচ্যুতদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও টেকসই পুনর্বাসনের ওপর জোর দেন। মামুন অর রশিদ আরও বলেন, "আমি মনে করি জলবায়ু পরিবর্তন বিপর্যয় কমাতে হলে আমাদের জীব-বৈচিত্র ও বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে, সুন্দরবনের গাছ ও প্রাণী কোনভাবেই ধ্বংস করা যাবে না তাহলে আমাদের বিপর্যয় আরো দিন দিন বাড়বে।" তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ে এমন আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আজকের আলোচনা থেকে প্রাপ্ত সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে, যাতে আগামী অর্থবছরে ইউনিয়ন পর্যায়ে বাজেট বরাদ্দ সহ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মূল বক্তা কাকলী হালদার তার উপস্থাপনায় বাংলাদেশের, বিশেষ করে খুলনা জেলার, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাবের ওপর তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে যেমন—নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যার কারণে একটু ভাল থাকার জন্য মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাচ্ছে ফলে তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।" বনভূমি উজাড়, কলকারখানা, যানবাহন বৃদ্ধির কারণে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে অক্সিজেন কমে যাওয়ার বিষয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরিবেশের বিপর্যয় ও জলবায়ু উদ্বাস্তু ঠেকাতে আমাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত সকলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন কমানোর জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেন। তাদের মতে, টেকসই বেড়িবাঁধসহ পরিকল্পিত উন্নয়ন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের বৃদ্ধি, সৌরশক্তির ব্যবহার ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়, খাদ্য ও পানির অপচয় রোধ, পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার কমানো, এবং নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি—এসব পদক্ষেপই দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এই গোলটেবিল বৈঠক জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায় থেকে উদ্যোগ গ্রহণ এবং সরকারের নীতি নির্ধারণে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মতামত